কবিরাজি বনাম রুকইয়াহ: ইসলামী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ
ভূমিকা
মানুষ যখন কোনো কষ্ট, জাদু, জ্বিনের প্রভাব কিংবা অজানা রোগে ভোগে, তখন সে মুক্তির জন্য বিভিন্ন পথ খোঁজে। অনেকে কবিরাজি, তাবিজ-কবচ বা ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেয়। আবার অনেকে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত বৈধ পদ্ধতি রুকইয়াহ শারইয়্যাহ অবলম্বন করে। এই দুই পথের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। এখানে আমরা তা কুরআন-সুন্নাহ ও বিজ্ঞানের আলোকে তুলনামূলকভাবে আলোচনা করব।
কবিরাজি: কুসংস্কারের পথ
কবিরাজি কী?
কবিরাজি বলতে বোঝানো হয়—তাবিজ-কবচ, মন্ত্র-তন্ত্র, অজানা ঝাড়ফুঁক এবং কখনো অজ্ঞাত উৎস থেকে পাওয়া ভেষজ বা ওষুধ দিয়ে রোগ নিরাময়ের চেষ্টা।
কবিরাজির সমস্যা:
শিরকের ঝুঁকি:
অনেক কবিরাজ জ্বিন ও শয়তানের সাহায্য নিয়ে কাজ করে। রাসূল ﷺ বলেন:
مَن عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ
"যে তাবিজ ঝুলালো, সে শিরক করলো।"
— (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস 17440)
ভ্রান্ত বিশ্বাস:
কবিরাজরা দাবি করে তাবিজ বা মন্ত্রেই মুক্তি, অথচ প্রকৃত মুক্তিদাতা কেবল আল্লাহ।
বাস্তবতা:
সাময়িক মানসিক সান্ত্বনা পেলেও স্থায়ী চিকিৎসা হয় না। অনেকে নতুন রোগ ও জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে।
রুকইয়াহ: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বৈধ চিকিৎসা
রুকইয়াহ কী?
রুকইয়াহ হলো কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নামসমূহ এবং রাসূল ﷺ এর শিক্ষা অনুযায়ী দোয়া পড়ে রোগীর উপর ফুঁক দেওয়া বা শ্রবণ করানো।
রুকইয়াহর প্রমাণ কুরআনে:
আল্লাহ বলেন:
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
“আমি কুরআন থেকে নাজিল করি, যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত।”
— (সূরা আল-ইসরা 17:82)
রাসূল ﷺ এর আমল:
আয়েশা (রা.) বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ إِذَا اشْتَكَى نَفَثَ عَلَى نَفْسِهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ وَمَسَحَ عَنْهُ
“রাসূল ﷺ অসুস্থ হলে, তিনি নিজে নিজের উপর মুআউইযাত (সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পড়ে ফুঁ দিতেন এবং হাত বুলাতেন।”
— (সহীহ বুখারী: 5016, সহীহ মুসলিম: 2192)
বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা:
শব্দের কম্পন (Sound Frequency):
গবেষণায় প্রমাণিত যে, কুরআনের তিলাওয়াত মানুষের ব্রেইনে আলফা ওয়েভ তৈরি করে, যা প্রশান্তি আনে ও স্ট্রেস হরমোন (Cortisol) কমায়।
(সূত্র: Journal of Religion and Health, 2017)
ইমিউন সিস্টেমে প্রভাব:
নিয়মিত কুরআন শ্রবণ ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
(সূত্র: International Journal of Psychology and Behavioral Sciences, 2018)
সাইকোথেরাপির বিকল্প:
রুকইয়াহ মানসিক থেরাপির মতো কাজ করে। রোগীর বিশ্বাস (Faith Healing), শব্দের শান্তিময় রিদম ও আত্মার তাওয়াক্কুল একসাথে রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
কবিরাজি বনাম রুকইয়াহ: তুলনা
| বিষয় | কবিরাজি | রুকইয়াহ |
|---|---|---|
| উৎস | লোকাচার, মন্ত্র, জ্বিনের সাহায্য | কুরআন ও সহীহ হাদীস |
| আক্বীদাহ | শিরকের ঝুঁকি | খাঁটি তাওহীদ |
| ফলাফল | সাময়িক, বিভ্রান্তি সৃষ্টি | স্থায়ী, আল্লাহর ইচ্ছায় শিফা |
| বৈজ্ঞানিক ভিত্তি | নেই | শব্দ থেরাপি, সাইকোথেরাপি, ইমিউন উন্নয়ন |
| আত্মিক দিক | শয়তানের উপর নির্ভরতা | আল্লাহর উপর নির্ভরতা |
উপসংহার
কবিরাজির পথ শয়তানের ফাঁদ, যা মানুষকে শিরক ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অপরদিকে রুকইয়াহ শারইয়্যাহ হলো রাসূল ﷺ এর শেখানো পদ্ধতি, যা খাঁটি তাওহীদের উপর ভিত্তি করে। কুরআন-সুন্নাহর এই চিকিৎসা পদ্ধতি শুধু আধ্যাত্মিক নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে এটি মানুষের শরীর ও মনে প্রশান্তি আনে।
তাই আসুন, আমরা কুসংস্কার ও কবিরাজির পথ ত্যাগ করে, আল্লাহর বাণী ও রাসূল ﷺ এর সুন্নাহ অনুসারে রুকইয়াহ শারইয়্যাহর মাধ্যমেই শিফা খুঁজি।