ভণ্ড কবিরাজের মুখোশ উন্মোচ
ভণ্ড কবিরাজের মুখোশ উন্মোচন
ভূমিকা
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে আজও অনেক মানুষ কুসংস্কার ও ভণ্ডামির শিকার হয়ে ভণ্ড কবিরাজের কাছে ছুটে যায়। তারা মানুষকে সুস্থ করার নাম করে আসলে তাদের বিশ্বাস, অর্থ ও জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। এই প্রবন্ধে আমরা তুলে ধরব ভণ্ড কবিরাজদের প্রকৃত চেহারা—তাদের প্রতারণা, শয়তানী কর্মকাণ্ড এবং বৈজ্ঞানিক ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের মিথ্যাচার।
ভণ্ড কবিরাজদের সাধারণ কৌশল
- তাবিজ-কবচের ব্যবসা:
অসুস্থতার আসল কারণ না জেনে তারা রোগীদের হাতে তাবিজ-কবচ গুঁজে দেয়, যা ইসলামে সুস্পষ্ট শির্কের অন্তর্ভুক্ত। - ভূত-প্রেতের ভয় দেখানো:
রোগের জৈবিক বা মানসিক কারণ ব্যাখ্যা না করে বলে, “তোমার উপর জিন চালান দিয়েছে” অথবা “কেউ তোমার উপর জাদু করেছে।” - অশ্লীল ও শয়তানী কাজ করানো:
অনেক সময় রোগীর কাছ থেকে অশালীন কাজ করানো হয় বা কালো মুরগি, নির্দিষ্ট খাবার, এমনকি কবরস্থানে রাত কাটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। - অতিরিক্ত অর্থ আদায়:
তারা ৫০০ টাকার জিনিসকে ৫০,০০০ টাকায় বিক্রি করে, আর অসহায় রোগী সব হারিয়ে ফেলে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রতিটি রোগের একটি নির্দিষ্ট কারণ ও চিকিৎসা আছে। অ্যালার্জি, মানসিক চাপ, হরমোনাল সমস্যা কিংবা ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগকে কবিরাজরা "জিন-ভূত" বলে চালিয়ে দেয়। এতে রোগীর সঠিক চিকিৎসা বিলম্বিত হয়, অনেক সময় মৃত্যুও ঘটে।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ
"যে তাবিজ ঝুলালো, সে শির্কে লিপ্ত হলো।" (আহমদ, হাকিম)
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا
“মানুষের মধ্যে কিছু লোক জিনদের আশ্রয় চাইত, ফলে জিনরা তাদেরকে আরও বিভ্রান্ত করত।” (সূরা জিন: ৬)
অতএব ভণ্ড কবিরাজের কাছে যাওয়া মানেই জাহান্নামের দিকে ধাবিত হওয়া।
বাস্তব প্রমাণ
- বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশিত হয় যে, কবিরাজদের প্রতারণায় মানুষ লাখ লাখ টাকা হারাচ্ছে।
- অসংখ্য নারী কবিরাজদের অশ্লীল প্রস্তাবের শিকার হচ্ছে।
- অসুস্থতা নিরাময়ের পরিবর্তে অনেকেই মৃত্যুবরণ করছে।
বিকল্প সমাধান
✅ কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক রুকইয়াহ
✅ আধুনিক চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
✅ সুন্নাহভিত্তিক চিকিৎসা (যেমন হিজামা, কালোজিরা, মধু)
উপসংহার
ভণ্ড কবিরাজরা হলো সমাজের ক্যান্সার। তারা অসহায় মানুষের কষ্টকে ব্যবসায় রূপ দিয়েছে। আমাদের উচিত—নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যকে সচেতন করা। আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করি, কোনো অবস্থাতেই ভণ্ড কবিরাজের ফাঁদে পা দেব না। কেবল কুরআন-সুন্নাহ ও বিজ্ঞানের আলোকে চিকিৎসা গ্রহণ করব।